তন্ত্রবিদ্যা শিখে শর্টকাটে বড়লোক হওয়ার ভাবনা থেকেই শিশু বলি দেওয়ার ইচ্ছা জেগেছিল অভিযুক্ত বিক্রম ভকতের। এমনই অভিযোগ স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দাদের। আর তারপরেই এলাকারই এক নয় বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণের পর গলা কেটে খুন করার অভিযোগ উঠেছে এলাকারই এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওই নাবালিকার অর্ধনগ্ন দেহ গলাকাটা অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই বৃহস্পতিবার সকালে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মালদার চাঁচল থানার গৌরহণ্ড গ্রামে। বিষয়টি বুঝতে পেরে অভিযুক্ত বিক্রম ভকতের বাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা। এমনকী গণপিটুনি দেওয়া হয় তাকেও। এই খবর পেয়ে গৌরহণ্ড গ্রামে বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে গণপিটুনি হাত থেকে অভিযুক্তকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত বিক্রম ভকতের বিরুদ্ধে মৃত নাবালিকার পরিবার তাদের মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছে। যদিও অভিযোগে তন্ত্র সাধনা অথবা নরবলির ব্যাপারে কোনও কথা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু গ্রামবাসীদের মুখে নরবলির কথা রীতিমতো চাউর হয়ে গিয়েছে। আর যাকে ঘিরে গৌরহণ্ড গ্রামে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই গ্রামে বসানো হয়েছে পুলিশি পিকেট। মৃতদেহটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে চাঁচল থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত নাবালিকার নাম চুমকি বসাক (৯)। তার বাড়ির গৌড়হণ্ড এলাকায়। এদিন কাক ভোরে গলাকাটা অবস্থায় বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে একটি পুকুরপাড়ে ওই নাবালিকার দেহ পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা। এরপরই এই ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মৃতের এক প্রতিবেশী অচিন মণ্ডল পুলিশকে অভিযোগে জানিয়েছেন, বুধবার রাত থেকে ওই নাবালিকা নিখোঁজ ছিল। পরে ওই নাবালিকার মা আমাদেরকে এসে বলে বিক্রম ভকত তার মেয়েকে চকলেট খাওয়ানোর নাম করে সন্ধ্যায় নিয়ে গিয়েছে। তারপর থেকেই তিনি তার মেয়ে কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রতিবেশী বউদির এই কথা শুনে আমরা ওই নাবালিকার খোঁজ শুরু করি। সারারাত খোঁজ না পেয়ে অবশেষে কাকভোরে ওই নাবালিকার গলাকাটা দেহ পুকুর পাড়ে পড়ে থাকতে দেখি। তাতেই আমাদের সন্দেহ হয়। এরপর বিক্রম ভকতের বাড়িতে গিয়ে ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই ওর মুখ থেকে অসংলগ্ন কথাবার্তা বেরতে থাকে। এরই মধ্যে কিছু গ্রামবাসী উত্তেজিত হয়ে ওর বাড়ি ভাঙচুর করে এবং গণপিটুনি দেয়। গ্রামবাসীদের একাংশের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে বিক্রম ভগত যাদুটোনা এবং তন্ত্রমতের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে কোনও চর্চা হলেই তাবিজ কবজ দেওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করতো ওই ব্যক্তি । সে বলেছিল নাকি খুব তাড়াতাড়ি প্রচুর অর্থ তার কাছে আসবে, সেই জন্যই সে তন্ত্র মতের বিদ্যা শিখছে, গ্রামবাসীদের ধারণা শর্টকাট পদ্ধতিতে তন্ত্রবিদ্যার মাধ্যমে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতেই ওই নাবালিকাকে নরবলি দিয়েছে অভিযুক্ত বিক্রম ভকত।
এদিকে অভিযুক্তকে গণপিটুনির পর রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। জখম অভিযুক্ত বিক্রম ভকতের চাঁচল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার অবস্থা সংকটজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ। চাঁচল থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃত নাবালিকার পরিবারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশি নজরবন্দিতে অভিযুক্তের চিকিৎসা চলছে। তার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কোনও বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু জানা যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করেই গলা কেটে খুন করা হয়েছে। পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।