মিজোরাম নির্মীয়মাণ রেল ব্রিজ দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৬ সদস্যর মৃত্যু

মিজোরামে নির্মীয়মাণ রেল ব্রিজ ভেঙে দুর্ঘটনায় মালদার একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হল। মৃতদের প্রত্যেকের বয়স কুড়ি থেকে ত্রিশ বছরের মধ্যে। সম্পূর্ণ পুরুষ শূন্য হয়ে গিয়েছে ওই পরিবারটি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যুর খবর মালদার পুখুরিয়া থানার কোকলামারী চৌদুয়ার গ্রামে পৌঁছতেই রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে আসে। এদিন গ্রামের কোনো বাড়িতেই জ্বলেনি উনুনও। দুপুর থেকে এই গ্রাম জুড়ে শুধু চলছে কান্নার রোল। যদিও এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মালদার কমপক্ষে ২৫ জন শ্রমিকের মিজোরামের নির্মীয়মাণ রেল ব্রিজ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে। এই মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও অনুমান করছে প্রশাসনের একাংশ। এই দুর্ঘটনায় মৃতদের অধিকাংশের বাড়ি রতুয়া ২ ব্লকের পুখুরিয়া থানার কোকলামারি চৌদুয়ার গ্রামে। এই গ্রাম থেকে অন্তত ৩০ জন শ্রমিক মিজোরামে গিয়েছেন বলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। এছাড়াও মালদার ইংরেজবাজার , কালিয়াচক ব্লক থেকেও অনেক শ্রমিকেরা গিয়েছেন মিজোরামে। যেখানে এই নির্মীয়মাণ রেল ব্রিজ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন মালদা শ্রমিকেরা।

এদিকে পুকুরিয়া থানার চৌদুয়ার গ্রামের একই পরিবারের যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের নাম, সাইদুর রহমান (৩০), মোজাফফর আলি (৩০)। এরা সম্পর্কে দুই কাকাতো ভাই। ওয়াসিম শেখ (২০), সেবু শেখ (২০)।* মৃত এই দুইজন প্রথম মৃত দুইজনের সম্পর্কে ভাইপো। আনসারুল শেখ (১৯) এবং মোশারফ শেখ (২০)* মৃত এই দুইজন সাইদুর রহমানের ভাগ্নে।

মৃতের পরিবারের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, প্রায় দেড় আগে সাইদুর সহ পরিবারের ছয় জন পুরুষ মিজোরামে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বুধবার দুপুরে তারা মোবাইল মারফত জানতে পারেন মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে একটি নির্মীয়মাণ রেল সেতু নির্মাণের সময় সেটি ভেঙে পড়ে। সেই দুর্ঘটনায় পরিবারের ছয় জনই মারা গিয়েছে। তারপরেই কান্নায় ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। মৃতদের এক আত্মীয় মহম্মদ হামিদুর রহমান বলেন, সাইদুর রহমান এবং মোজাফফর আলি সহ পরিবারের ছয়জন পুরুষ কাজের জন্য মিজোরামে গিয়েছিলেন। মোটা টাকা কাজ করে রোজগার করে নিয়ে আসবেন।* কুড়ি থেকে বাইশ জনের পরিবার। তাদের জন্যই ওরা মিজোরামে কাজ করতে গিয়েছিল। কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় সব শেষ করে দিল। নির্মীয়মাণ যে রেল ব্রিজটি তৈরি হচ্ছে, সেটি নাকি ৫০ তলা বিল্ডিং-এর থেকে উঁচু। সেখান থেকেই হুড়মুড়িয়ে গোটা ব্রিজটা ভেঙে পড়ল। মোবাইলে যখন ছবি দেখেছি তখন কোনো আত্মীয়ের ছবি চিনতে পারছিলাম না। এতটাই বাজে অবস্থা ছিল। পরিবারটা অসহায় পড়ল।* অনেকের স্ত্রী, ছোট ছোট ছেলে মেয়ে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকার এবং প্রশাসন যাতে সহযোগিতা করে এই দাবি আমরা রেখেছি। স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, চৌদুয়ার গ্রামের যারা মিজোরামে এই নির্মীয়মাণ রেল ব্রিজে কাজ করছিলেন, তাদের অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে। অনেকের দেহ এখনো পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি এবং খুঁজেও পাওয়া যায়নি। পাহাড়ের নীচে দেহ ছিটকে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে এখন সরকারের সহযোগিতায় আমরা আশা করছি।

জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক মালদা সদর এবং চাঁচল মহকুমা শাসক সহ পদস্থ কর্তারা মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সবরকম সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এখনো পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু বলা যাচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − five =