চাকরি বাতিলে নির্দেশ সংশোধন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের, ৩৬ নয়, চাকরি খোয়ালেন প্রায় ৩২ হাজার

গত শুক্রবার ৩৬ হাজার ‘অপ্রশিক্ষিত’ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে হাইকোর্ট। এরপরই অনেকে অভিযোগ তোলেন, তাঁরা প্রশিক্ষিত ছিলেন, তারপরও নাম বাদ গিয়েছে। এরপর সেখানে দেখা যায় মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে প্রশিক্ষিতদের একাংশ অপ্রশিক্ষিতের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন। এরপরই মঙ্গলবার বিচারপতি জানান, ৩৬০০০ নয়, প্রাথমিক চাকরি বাতিলের সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার। নির্দেশ সংশোধন করে এমনটাই জানান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মামলায় অভিযোগ করা হয় যে প্রায় ৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীন শিক্ষক ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরি পেয়েছিল। নির্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ৩৬ হাজার লিখেছিলেন। এদিন তা সংশোধন করেন তিনি।
এরই পাশাপাশি এদিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের কথা শোনান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
কারণ, এদিন প্রশিক্ষিত প্রায় ৪ হাজার শিক্ষক চাকরি ফিরে পেলেও প্যারা টিচাররা যে আবেদন করেছিলেন তাতে কোনও সদর্থক উত্তর তাঁরা পাননি। যে ২ হাজার ৭৭০ জন প্যারা টিচার আদালতে দাবি করেছিলেন, তাঁদের পড়ানোর অভিজ্ঞতা যেহেতু রয়েছে, তাই অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট না দিলেও তাঁদের চাকরি থাকা উচিৎ। এরপরই বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, এটা তাঁর এক্তিয়ারভুক্ত নয়। তাঁর নির্দেশ তিনি বদলাতে পারবেন না। তাঁর সে ক্ষমতা নেই। একইসঙ্গে তিনি বলেন, মুখ খুললে ‘রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হয়ে যাবে।‘
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘২০১৬-র নিয়োগ প্রক্রিয়া এত বেআইনিভাবে হয়েছে যে তা বাতিল করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। এত ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে যে কে বৈধভাবে পেয়েছে আর কে অবৈধ ভাবে পেয়েছে সেটা খুঁজে বের করা সম্ভব নয়।’
এরই পাশাপাশি এজলাসে উপস্থিত প্রাথমিক শিক্ষক থেকে পার্শ্ব শিক্ষক হওয়াদের উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘যে দালালরা গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং যারা গ্রেপ্তার হবেন তাদের হাতে এত কোটি কোটি টাকা কোথা থেকে এসেছে? শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে, হয়তো হবেও। আমি কী করতে পারি ? যারা টাকা নিয়েছে, অপরাধী তাদের বিরুদ্ধে কথা বলুন। আমি কোনও মন্তব্য করলে তা রাজনৈতিক মন্তব্য বলে মনে হতে পারে, তাই আমি কোন মন্তব্য করছি না।’
প্রসঙ্গত, টেট নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় উল্লেখযোগ্য নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এদিন সেই সংখ্যায় সংশোধন করা হয়েছে। সংখ্যাটা প্রায় ৩২ হাজার। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও নির্দেশ ছিল এই শিক্ষকরা আগামী চার মাস প্যারা টিচার বা পার্শ্ব শিক্ষক হিসেবে কাজ করবেন এবং সেই স্কেলেই বেতন পাবেন। তবে একইসঙ্গে আদালতের নির্দেশ, তিন মাসের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এরপরেই বিক্ষোভ দেখান ওই ‘কর্মচ্যুত’ প্রাথমিক শিক্ষকরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, তাঁদের কথা না শুনেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − 5 =