সোমবার বাড়ি থেকে স্ত্রীকে বলে বেরিয়েছিলেন ভব্য লাখানি নামে বছর ৪৪-এর এক ব্যবসায়ী। ভবানীপুরের প্রিয়নাথ মল্লিক লেনের বাসিন্দা। ব্যবসার কাজে যাচ্ছি। কিন্তু তারপর থেকে আর খোঁজ মিলছিল না। এরপরই ব্যবসায়ী স্ত্রী ভবানীপুর থানায় একটি মিসিং ডায়েরি করেন। এরপর ঘটনার তদন্তে নেমে ভবানীপুরের ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোন উদ্ধার হয় বিডন স্ট্রিট থেকে। সেই ফোনেরই সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে, মোবাইলের শেষ কথা হয় ব্যবসায়ীর নিমতার এক বন্ধুর সঙ্গে। তাঁর বাড়িতে হানা দিতেই হয় রহস্যভেদ।
এদিকে পুলিশ তদন্তে নেমে এও জানতে পারে, মৃতের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীদের দাবি, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ ছিলেন অনির্বাণ গুপ্তা। ভাব্য ছিলেন ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটর। ভাব্য বেশ কিছুদিন আগে বড় রকমের ওষুধের বরাত দিয়েছিলেন অনির্বাণের মাধ্যমে। কিন্তু মাল আর এসে পৌঁছয়নি। ইতিমধ্যে অনির্বাণ যে কোম্পানিতে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজ করত সেই কোম্পানি ছেড়ে দেয় বলে জানা যায়। তাই টাকা ফেরতের জন্য ভাব্য প্রতিনিয়ত অনির্বাণকে চাপ দিচ্ছিলেন বলে জানা যায়। গত পড়শুদিন টাকা দেওয়ার জন্য অনির্বাণ তার নিমতার বাড়িতে ডেকে পাঠান ভাব্য লাখানিকে। তারপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন ভাব্য।
এবার জলের ট্যাঙ্কের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় ব্যবসায়ীর দেহ। পুলিশ তদন্তে নেমে এও জানতে পারে, জলের ট্যাঙ্কে দেহ ফেলে বাইরে থেকে পাঁচিল গেঁথে দেওয়া হচ্ছিল। তার আগেই পুলিশ দেহ উদ্ধার করে। স্বাভাবিক ভাবেই ভবানীপুরের ব্যবসায়ীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে, তার ‘বিজনেস পার্টনারে’র বিরুদ্ধে। এরপরই এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় অনির্বাণ গুপ্তকে।
পুলিশ ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পরশু থেকে নিখোঁজ ছিলেন ভবানীপুরের এই ব্য়বসায়ীর। তাঁর স্বামী সোমবার ব্যবসার কাজেই যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে আর ফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মঙ্গলবার তিনি ভবানীপুর থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। এরপরই তদন্তে নেমে বিডন স্ট্রিট থেকে মোবাইল উদ্ধার করেন পুলিশ আধিকারিকেরা। আর এই ফোনেরই সূত্র ধরে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ‘ক্লু’ পায় পুলিশ। কারণ, ফোনে একবার ব্যবসায়ী তাঁর স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন নিমতায় বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছি। সেখানে যেতেই অনেক কিছু স্পষ্ট হয় তদন্তকারী আধিকারিকদের কাছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ব্যবসায়ীর বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর কথায় একাধিক অসঙ্গতি নজরে আসে। এরপর বাড়ির পাশে জলের ট্যাঙ্কে তল্লাশি চালাতেই দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করছে উইকেট দিয়ে মারা হয়েছে। তারপর দেহ জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়া হয়। প্রমাণ লোপাট করতে বাইরে পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলারও চেষ্টা হয়। এরই পাশাপাশি খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের কাছ থেকে রক্ত মাখা জামা সহ বেশ কিছু সামগ্রীও উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলি সব ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠান হয়েছে। এদিকে মৃত ব্যবসায়ীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান হয় কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, অনির্বাণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এলাকায় কারও সঙ্গে মিশতেন না। এমনকী ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শুক্লা চট্টোপাধ্যায়ও সেইভাবে চেনেন না অনির্বাণকে। কাউন্সিলরের দাবি, তিনি শুধু এতটুকু জানেন যে, অনির্বাণ ভাড়া থাকতেন ওই বাড়িতে। শুক্লা আরও জানান, যাঁরা এইভাবে কিছু না জেনে ভাড়া দিচ্ছেন, তাঁরা যেন ভাড়াটের পরিচয়পত্র জমা নিয়ে, খোঁজখবর নিয়ে আগামীদিনে বাড়িভাড়া দেন।
এই ঘটনার তদন্তে আরও একজন গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোনাগাছির দরজিপাড়ার বাসিন্দা সুমন দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই বিষয়ে কোনও কিছু জানা যায়নি।