দেশ-বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, ধৃত ১৪

দেশ-বিদেশের বিমানবন্দরে চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং  বিভিন্ন বেসরকারি বিমান সংস্থার জাল নথি তৈরি করে প্রতারণার ঘটনায় বেসরকারি একটি সংস্থার দুই কর্ণধার, ১১ জন মহিলা সহ মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করল বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ। এই প্রতারণার মূল পাণ্ডা অরুণ সৌখিন এবং সংস্থার অন্যতম কর্ণধার অদিতি বদ্রাইকা বলে জানানো হয়েছে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশের তরফ থেকে। সঙ্গে উদ্ধার করা হয় একাধিক ইলেকট্রনিক্স গ্যাজেট ও বেসরকারি বিমান সংস্থার জাল নথি।  সঙ্গে উদ্ধার হয়, কাস্টমার ডেটা, হার্ড ডিস্ক, মোবাইল ফোনও।

বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার তরফ থেকে জানানো হয় যে, গত ১৯ ডিসেম্বর বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ করেন মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা হাকিম শেখ। পুলিশের কাছে যে অভিযোগ করেন তাতে তিনি জানান, চাকরির জন্যে একটি জব পোর্টালে নিজের বায়োডেটা আপলোড করেন। সেখান থেকে খোঁজ পেয়ে একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয় বিমানবন্দরে চাকরি দেওয়া হবে। তবে তার পরিবর্তে তাঁকে সেই সংস্থায় ট্রেনিং কোর্স করতে হবে। এবার সেই ট্রেনিং বাবদ ওই অভিযোগকারীর থেকে প্রাথমিক ভাবে ১০ হাজার টাকা নেয় ওই সংস্থা। ট্রেনিং শেষে অভিযোগকারীকে প্লেসমেন্ট বাবদ আরও ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে বলে তারা। এবার সেই ব্যক্তি ৫০ হাজার টাকা জমা দিলে তাকে ব্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে কার্গোতে চাকরির অফার লেটার দেওয়া হয়। এরপর হাকিমবাবু ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে জানতে পারেন যে এটি একটি ভুয়ো চাকরি। এরপর কলকাতা ফিরে এসে ওই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সংস্থার পক্ষ থেকে তাকে পুনরায় জানানো হয় কলকাতার একটি বেসরকারি বিমান সংস্থায় তাকে চাকরি দেওয়া হবে। আশ্বাস অনুসারে তাকে ওই বেসরকারি বিমান সংস্থার নামে একটি অফার লেটার দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে তার থেকে নগদে আরও ৫০ হাজার টাকা দিতে বলা হয় সংস্থার তরফ থেকে। একইসঙ্গে জানানো হয়, সল্টলেকের একটি হোটেলের সামনে থেকে ওই টাকা নেবেন ওই সংস্থার এক কর্মী। কথামতো সেই টাকাও দেন হাকিমবাবু। এরপর সংস্থার তরফ থেকে একটি বিমান সংস্থার অফার লেটার দেওযা হয়। এরপর অভিযোগকারী সেই বিমান সংস্থার অফিসে যোগাযোগ করলে জানতে পারেন ওই বিমান সংস্থার নথি জাল করে ভুয়ো অফার লেটার তৈরি করেছে ওই সংস্থা। এরপরই লক্ষাধিক টাকা প্রতারিত হয়েছে বুঝতে পেরে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হন ওই ব্যক্তি।

এরপর ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, এই বেসরকারি সংস্থাটি বিভিন্ন চাকরির অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিকে টার্গেট বানাত। এরপরই তাদের দেশের এবং বিদেশের বিমানবন্দরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণা করত। পাশাপাশি পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতার চিনার পার্ক, কাঁকুড়গাছি, পার্ক স্ট্রিট সহ দুর্গাপুর, দিল্লি, মুম্বাই, হরিয়ানা সহ একাধিক রাজ্যে এই প্রতারণা চক্র জাল বিস্তার করে রেখেছে। এই সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক বেসরকারি বিমান সংস্থার জাল নথি তৈরি করে সাধারণ মানুষদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলার কৌশল সাজিয়েছিল এই সংস্থা বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এই ঘটনায় এই চক্রের অন্যদের খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − two =