৩৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় শান্তনু ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী অয়ন শীলকে। ইডি আধিকারিকরা জানান, দীর্ঘ জিজ্ঞাসবাদের পর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে। শুধু তাই নয়, উদ্ধার করা হয়েছে প্রচুর নথিও। সবথেকে বড় যে ঘটনাটি অয়নকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডি-র আধিকারিকরা বুঝতে পেরেছেন তা হল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতেই তিনি জড়িত তা নয়, পাশাপাশি দুর্নীতি হয়েছে পুরসভা থেকে শুরু করে দমকলের নিয়োগেও। ইডি-র তরফ থেকে এও দাবি করা হয় যে, হাজার হাজার প্রার্থীর তথ্য মিলেছে। আর এই চাকরি দেওয়ার নামে ৫০ কোটি টাকা তুলেছেন অয়ন। একইসঙ্গে ইডি-র তরফ থেকে আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি এদিন আদালতে এও জানান, ‘আমরা সোনার খনির খোঁজ পেয়েছি। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তাতে এই ব্যক্তির হাত গোটা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।’ আর সেই কারণেই এদিন ধৃত প্রোমোটারকে নিজেদের হেপাজতে নেওয়ার আর্জি জানান ইডি-র তদন্তকারীরা। তাঁদের সেই আর্জি মেনে অয়নকে ১৩ দিনের ইডি হেপাজতে পাঠায় বিশেষ আদালত।
এরই রেশ ধরে ইডি-র তরফ থেকে এও জানানো হয়, শান্তনুর কাছ থেকে যে আইফোন মিলেছিল তা থেকে ডেটা এক্সট্র্যাক্ট করা হয় অর্থাৎ তথ্য বের করা হয়। সেখানে দেখা যায়, অয়নের সঙ্গে শান্তনুর কথা হয়েছে। সেখান থেকেই নতুন মোড় নেয় তদন্ত। পাশাপাশি তদন্তকারীরা এও জানতে পারেন, অয়নের কোম্পানি-ই ওএমআর শিট ছাপানোর দায়িত্বে ছিল। ইডি-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সংস্থার মাধ্যমেই পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হত। ইন্টারভিউ নেওয়া থেকে শুরু করে ওএমআর শিট ছাপানো, নিয়োগপত্র দেওয়া পর্যন্ত সব প্রক্রিয়ার জন্য টেন্ডার পেত এই অয়ন শীলের সংস্থা।
শুধু তাই নয়, ইডি-র তরফ থেকে এও দাবি করা হয় যে, পুরসভার পরীক্ষায় প্রভাব খাটানো হত প্রভাবশালীদের দিয়ে। এরই রেশ টেনে ইডি-র আইনজীবী এদিন এও জানান, মজদুর ও টাইপিস্ট পদেও দুর্নীতি হয়েছে। ৬০ টির বেশি পুরসভার নিয়োগেনিয়োগের ক্ষেত্রে ছড়িয়ে গেছে এই দুর্নীতির জাল। এমনকী পুরসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ বোর্ডে কারা থাকবেন তাও সিদ্ধান্ত নিত অয়নের এই সংস্থাই। সেখানে প্রভাব থাকত শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্য়ায়েরও।। ২০১৮-২০১৯ সালের মধ্য়ে এই নিয়োগ হয়েছিল বলে দাবি ইডির। মাত্র ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অয়ন-শান্তনু দুজনের মধ্য়ে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার লেনদেন হয় বলে ধারনা করছে ইডি। মাত্র কয়েকটা দিনের মধ্যে এত টাকার লেনদেন কেন, নিয়োগ দুর্নীতির অর্থই কি লেনদেন হয়েথছিল, উত্তর জানতে অয়ন শীলকে লাগাতার জেরাও করছে ইডি। আর এরই সূত্র ধরে, কটাক্ষের সুরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফ থেকে বলা হয় যে, ‘দুর্নীতি এত চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে যে একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই বাঁচাতে পারে বাংলাকে।‘
প্রত্যুত্তরে অয়নের আইনজীবী দাবি করেন, এবিএস ইনফোজোন নামে সংস্থার ডিরেক্টর অয়ন। এরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়নি। আদতে এই সংস্থাটি রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। এখানেই ইডি-র অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করা হয় অয়নের আইনজীবীর তরফ থেকে। একইসঙ্গে অয়নের আইনজীবী এও দাবি করেন, একজন অভিযুক্তর কথায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁর মক্কেলকে। তবে কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি। পাশাপাশি অয়নের আইনজীবী এও জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য পুরসভা অনুমতি দিয়েছিল। সরকার অনুমোদিত কোম্পানি দ্বারা নিয়োগ করা হত বলেও দাবি অয়নের তরফে। প্রত্যুত্তরে ইডি-র তরফ থেকে কটাক্ষের সুরেই পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চাওয়া হয়, ‘স্যর ওঁদের জিজ্ঞেস করুন ওএমআর শিটে দাগ দেওয়ার অনুমতি ছিল কি না? সরকারের ওপর থেকে নীচ দুর্নীতিতে ভরা।’
এদিকে সূত্রে খবর, বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত নথি উদ্ধারের বিষয়টি সিবিআই-এর দুর্নীতিদমন শাখাকে জানাবে ইডি। কারণ, ইডি-র ধারনা, ৬০ টিরও বেশি পুরসভার নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এই ৬০টি পুরসভার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কামারহাটি পুরসভা, হালিশর পুরসভা, পানিহাটি, উত্তর ও দক্ষিণ দমদম পুরসভা। আর এই দুর্নীতির জেরে চাকরি পেয়েছেন প্রায় ৫,০০০ প্রার্থী।