ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এ মরসুমেই অভিষেক। প্রথম ম্যাচে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ইনজুরি টাইমে গোল খেয়ে হার। দ্বিতীয় ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে অ্যালেক্সিস গোমেজের পেনাল্টি গোলে এগিয়েছিল মহমেডান। আবারও ইনজুরি টাইম গোল, এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তষ্ট থাকতে হয়েছে। চেন্নায়িনের বিরুদ্ধে নানা বিষয়েই আতঙ্ক কাজ করছিল। প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ, অচেনা পরিবেশ-প্রতিপক্ষ, আর শেষ মুহূর্তের ডিফেন্স। ম্যাচের প্রথম ২৫ মিনিট দুর্দান্ত চেন্নায়িন এফসি। মহমেডান ব্যাকফুটে। শেষ মুহূর্তে ডিফেন্সে জান লড়িয়ে দেয় মহমেডান স্পোর্টিং। ইনজুরি টাইমে একের পর এক বিপদ, কয়েক মুহূর্ত কাটানোর অপেক্ষা। সফল মহমেডান। চেন্নায়িনের বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে আইএসএলে প্রথম জয় মহমেডান স্পোর্টিংয়ের।
গত দু-ম্যাচের ভুল থেকে অনেকটাই শিক্ষা নিয়েছে মহমেডান স্পোর্টিং। বরং ম্যাচ যত এগিয়েছে, তুলনামূলক এলোমেলো দেখিয়েছে চেন্নায়িন ডিফেন্সকে। বোঝাপড়ার অভাব স্পষ্ট। কে বল ক্লিয়ার করবেন, নিজেদের মধ্যেই সংযোগ নেই! ম্যাচের ৩৩ মিনিটে সেরা সুযোগ পায় মহমেডান। চেন্নায়িন বক্সের লং বল। প্রতিপক্ষ ডিফেন্সের ভুলে বল পান অ্যালেক্সিস গোমেজ। সামনে শুধুই গোলকিপার। এগিয়ে আসছিলেন চেন্নায়িন এফসি গোলকিপার শমিক মিত্র। তাঁকে কাটিয়ে গোলের আরও কাছে অ্যালেক্সিস গোমেজ। যদিও তাঁর বাঁ পায়ের শট পোস্টে লাগে।
ম্যাচের ৩৯ মিনিটে অবশেষে সেই মুহূর্ত। প্রতিপক্ষর দ্বিতীয় ভুল, এ বার কাজে লাগাল মহমেডান। আবারও লং বল। চেন্নায়িনের দুই ডিফেন্ডারের ভুল বোঝাবুঝিতে বল পান লালরেমসাঙ্গা ফানাই। গোলকিপার শমিক আবারও এগিয়ে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু পাহাড়ি ফানাইয়ের দৌড় সামলানো কঠিন ছিল। গোলকিপারকে কাটিয়ে ডানদিক থেকে বাঁ দিকে চলে আসেন। ফাইনালের দুর্দান্ত ফিনিশে ১-০ এগিয়ে যায় মহমেডান স্পোর্টিং। অথচ বল পজেশন থেকে সুযোগ, অনেক অনেক এগিয়ে ছিল চেন্নায়িন এফসি। খেলার স্রোতের বিপরীতেই লিড মহমেডানের।
প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে আবারও একটা দুর্দান্ত সুযোগ পায় মহমেডান। ঠিক একই ভঙ্গিতে। এ বারও ছিলেন রেমসাঙ্গা। যদিও কোনওরকম তাঁকে আটকায় চেন্নায়িন ডিফেন্স। ১-০ লিড নিয়েই বিরতিতে মহমেডান স্পোর্টিং। সেট পিস সামলানোর ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা রয়েছে মহমেডানের। চেন্নায়িন প্রথম ঘণ্টাতেই ৮টি কর্নার পায়! প্লেয়ারদের চেয়েও আশঙ্কায় ভুগছিলেন কোচ আন্দ্রে চের্নিশভ। তবে তাঁর ছাত্ররা দুর্দান্ত ভাবে পরিস্থিতি সামলে যাচ্ছিল।
চেন্নায়িন জার্সিতে অভিষেক মোহনবাগানের প্রাক্তন কিয়ান নাসিরির। মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কাছে আরও একটা দুর্দান্ত সুযোগ আসে, কাসিমোভের দুর্দান্ত শট বাঁচিয়ে দেন শমিক। পরের মুভেই আরও একটা সুযোগ। কাসিমোভের পাস, যদিও রেমসাঙ্গা বল ধরার পরই অফসাইডের ফ্ল্যাগ তোলেন সহকারী রেফারি। রিপ্লে-তে অবশ্য ধোঁয়াশা তৈরি হয়। রেমসাঙ্গা অনসাইডে ছিলেন বলেন ধারাভাষ্যকাররাও।
ম্যাচের ৭৮ মিনিটে মহমেডানের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার অ্যালেক্সিস গোমেজ চকিত শট নিয়েছিলেন। বাঙালি শমিকের হাতে রক্ষা পায় চেন্নায়িন এফসি। এখানেই শেষ নয়, নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তের রেমসাঙ্গার মাইনাসে কাসিমোভের জোরালো শট বাঁচিয়ে দেন শমিক। মহমেডানের অনবরত আক্রমণে অস্বস্তিতে পড়ে চেন্নায়িন। সেই ভুলেই পেনাল্টি পায় মহমেডান। মান্ডজুকি পেনাল্টি মিস করে অস্বস্তি বাড়ান সাদা-কালো শিবিরে। কাউন্টার অ্যাটাকে ব্র্যামবোলোর শট গোললাইনে ক্লিয়ার করেন গৌরব বোরা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগে, হার, ড্র এবং জয়। সাবালক হচ্ছে মহমেডান স্পোর্টিং।