২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির মানিক, সত্য বলতে চান, জানালেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে

দু’ঘণ্টার মধ্যে জেলবন্দিকে তলব। যথা সময়ে সেই বন্দির এজলাসে পৌঁছে যাওয়া। তারপর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করা থেকে একান্তে কথোপকথন, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মানিক ভট্টাচার্যের জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে বুধবার যা হল তা বেশ নজরকড়া ঘটনা বললে কম বলা হবে না। প্রসঙ্গত, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় সশরীরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। এদিন বেলা ৩ টেয় হাইকোর্টে নিয়ে আসা হয়েচিল জেলবন্দি মানিককে। অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট না নিয়েই নিয়োগ করার যে অভিযোগ ওঠে, সেই মামলাতেই এদিন তলব করা হয় মানিককে। আদালত কক্ষে বিচারপতির একের পর এক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। পরবর্তীকালেও তাঁকে ডাকা হলেই তিনি আসবেন বলে জানান মানিক।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে ২০১৬ সালে ৪২ হাজার ৫০০ জন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ হয়েছিল। তাতে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মামলা করেন বিজেপির আইনজীবী নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। সেই মামলার শুনানিতেই ডাকা হয় মানিককে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে মানিক ঢোকার পরেই তাঁকে বলা হয় কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়াতে। পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক বিচারপতির কথা মতো তাই করেন। তারপর চলে একের পর এক প্রশ্ন। নিয়োগ পদ্ধতি, সংরক্ষণ নীতি ইত্যাদি নানান বিষয়ে মানিককে প্রশ্ন করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মানিককে প্রশ্ন করেন, ‘২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কী জানেন?’ উত্তরে মানিক বলেন, ‘আদালত ডেকেছে তাই এসেছি। আমি জেলে রয়েছি। আমার কাছে কোনও তথ্য বা নথি নেই। তাই স্মরণে যা আছে, তাই বলতে পারি।’ এরপর ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সিলেকশন কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে মানিক বলেন, ‘হ্যাঁ, করা হয়েছিল। যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা পর্ষদ নিয়েছিল। আমি কীভাবে এগুলো বলতে পারি?’ বিচারপতি বলেন, ‘পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি হিসেবে আপনার কাছে এগুলো জানা যেতে পারে।’ এরপরই ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার কে ফল প্রকাশ করেছিল সে সম্পর্কে জানতে চান বিচারপতি। মানিক বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারি না। বিশেষ করে এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে বোধগম্য নয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ার মোট নম্বর তৈরি করে বিভিন্ন বিভাগ মিলে।’ বাইরের কোনও সংস্থাকে রেজাল্ট প্রস্তুত করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল? বিচারপতির এই প্রশ্নের উত্তরে মানিক জানান, একটি সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছিল, তবে তার নাম এখন আর মনে নেই। বিচারপতি এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির নাম উল্লেখ করাতে, মানিক বলেন, ‘হ্যাঁ ওই ধরনের নাম শুনেছি।’ এরপই বিচারপতি প্রশ্ন করেন, অ্যাপ্টটিটিউড টেস্ট না নেওয়ার ব্যাপারে। বলেন, ‘সভাপতি হিসেবে আপনার সময় নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক?’ মানিক জানান, অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়েছিল। তখন কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ নীতি মানা হয়েছিল কি না, প্রশ্ন করলে, মানিক বলেন, ‘যতদূর মনে পড়ছে আইন অনুযায়ী মানা হয়েছিল।’
প্রশ্নোত্তর শেষে বিচারপতি বলেন, ‘এখন আমার আর কিছু জানার নেই। আপনি যে বয়ান দিয়েছেন, তাতে স্বাক্ষর করে চলে যাবেন।’
এদিন মানিক আদালত ছেড়ে যাওয়ার আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে এও বলেন, ‘হুজুর আপনি যখন আমায় ডাকবেন তখন চলে আসব। ১৫ মিনিট সময় দিলেই হবে। আমি সত্যিটাই বলতে চাই। সত্য সহজ, সত্য সুন্দর। পরে আমার বিরুদ্ধে যা পদক্ষেপ করা হোক। আমি মেনে নেব।’এসব চলতে চলতেই দেখা যায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর কাছে ডেকে নেন মানিককে। দু’জনে একান্তে মিনিট দশেক কথা বলেন। তারপর বিচারপতির উদ্দেশে ‘থ্যাঙ্ক ইউ স্যার’ বলে এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান মানিক।আইপিএল ম্যাচ যেদিন থাকবে সেদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two + 4 =