‘রাজ্য-রাজভবন-বিকাশভবন’ এবার থেকে একসঙ্গে কাজ করবে। মঙ্গলবার রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে পাশে নিয়ে এমনই ঘোষণা করতে দেখা গেল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে। এদিন রাজভবনে এক বৈঠকে অংশ নেন আচার্য, উপাচার্য ও শিক্ষামন্ত্রী। আর এই বৈঠক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, ‘রাজ্য-রাজভবন সংঘাতে ইতি।‘ এমনকী রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে ‘ আচার্য’ সম্বোধনও করেন তিনি। এরই পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীর সংযোজন, ‘আমরা একটি বৈঠক করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত খুঁটিনাটি-হাল হকিকত খুঁটিয়ে জেনেছেন আচার্য । প্রত্যেক উপাচার্যের সঙ্গে মাননীয় আচার্য আলাদাভাবে কথা বলেছেন।‘
এদিকে জগদীপ ধনকড় রাজ্যপাল থাকাকালীন পরপর দুবার আচার্য হিসেবে বৈঠকে ডেকেছিলেন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের। কিন্তু কোনওবারই কোনও উপাচার্য সেই বৈঠকে হাজির হননি। এবার সিভি আনন্দ বোস রাজ্যপাল পদে আসার পর হল সেই বৈঠক। এদিন রাজভবন প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে শিক্ষামন্ত্রী এও জানান, ‘প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদাভাবে খোঁজ খবর নিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয় এবং দফতরের উপর পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছেন। আজকের বৈঠকের মুল নির্যাস বিরোধ নয় সম্বন্বয়। এটাই এখন থেকে জারি থাকবে আগামী দিনের জন্য। এতদিন পর্যন্ত যা বিতর্ক ছিল তা এখন অতীত।’
উল্লেখ্য, এতদিন পর্যন্ত বারংবার উঠে আসত রাজ্যের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত, বিকাশভবনের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত। বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক ইস্যুতে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এদিন তারই অবসান ঘটল। আচার্যর সামনেই ব্রাত্য বসু পরিষ্কার করে দিয়ে জানান, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক বৈঠক। এই বৈঠকের জেরে আর কোনও বিরোধ নয়, শুধুই সমন্বয়।‘
এই ইস্যুতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী পাল্টা কটাক্ষের সুরে জানান, ‘শিক্ষামন্ত্রীর বলা উচিত ছিল মুখ্যমন্ত্রী হবেন আচার্য। ওরা বলেননি, ধনকড় হবেন, না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন বিল আনলেন ওরা রাজ্যপাল থাকবেন না বলে। মঙ্গলবার আবার বৈঠকে হাজির হলেন। আমরা চাইব শিক্ষাবিদ হোক আচার্য। আর রাজ্যপাল-নবান্ন-বিকাশভবন একসঙ্গে কাজ করবে এটাই তো হয়ে এসেছে। এর পাশাপাশি এ প্রশ্নও তোলেন, ‘এতে নতুন কী আছে’? একইসঙ্গে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘কুড়িজন উপাচার্যকে ইউজিসির নির্দেশ না মেনে রাজ্যপালকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তাঁরা নিয়োগ করেছিলেন। সেই মামলা চলছে। সমস্ত জায়গায় আচার্য হিসাবে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে বাস্তবায়িত হয়নি। আমরা চাই সংঘাতের আবহ না থাকুক। এটাই স্বাভাবিক যে রাজভবন-রাজ্য-নবান্ন একসঙ্গে কাজ করবে। এটা পরিবেশ তৃণমূলই নষ্ট করেছিল।‘
বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় থাকাকালীন তাঁর জমানায় রাজ্য রাজ্যপাল সংঘাত বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে। ধনখড়ের আমলেই রাজ্যপালের পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার জন্য বিল আনা হয়েছিল বিধানসভায়। উল্লেখ্য, শিক্ষা দফতরের প্রচুর ফাইল আটকে রয়েছে রাজভবনে। ব্রাত্য বসুরা বারবার বলেছেন, রাজ্যপালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হতে হচ্ছে। এরপর এদিন সমন্বয়ের সুর নিতান্তই তাৎপর্যপূর্ণ।